মুহম্মদ তরিকুল ইসলাম, পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় জাল-জালিয়াতির মামলায় ভুটুজোত পাঠানপাড়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার আব্দুল আজিজ ও শারীরিক শিক্ষক তরিকুলসহ ১৯জনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
গত সোমবার (১৪ অক্টোবর) বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-১ পঞ্চগড়ে জামিনের জন্য হাজিরা দিতে গেলে ২৩ জনের মধ্যে ১৯ জনকে কারাগারে পাঠানো হয় এবং ৪ জনের জামিন মঞ্ছুর করেন আদালত।
জানা যায়, উপজেলার দেবনগড় ইউনিয়নের মানিকডোবা গ্রামের মৃত শামসুদ্দিনের ছেলে ফারুক হোসেন গত ২০২২ সালের জুলাই মাসে দুটি ঘটনাস্থলে সিআর ৬২৭/২২পি (সদর) নং জাল জালিয়াতির মামলা আনায়ন করেন। এরপর বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-১, (সদর) তদন্তের জন্য পঞ্চগড় সিআইডিকে নির্দেশ দেন।
আরও জানা যায়, সিআর ৬২৭/২২পি (সদর) নং মামলার ঘটনার পর গত ২০০৮ সালের দিকে বিজ্ঞ তেঁতুলিয়া সহকারী জজ আদালত পঞ্চগড়ে ১৮৩/২০০৮ নং স্বত্ত্বের মামলা হলে পরবর্তীতে তাহা আপোষ মীমাংসার জন্য দুটি পৃথক সোলেনামা দাখিল করা হয়। ১ম সোলেনামাটি গত ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ৩তারিখ সকল বাদীপক্ষ ও স্বত্ত্বের ওই মামলার ২২ থেকে ৪০নং বিবাদীপক্ষ আদালতে সোলেনামা দাখিল করেন। ২য় সোলেনামাটি গত ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২৯তারিখ ১ থেকে ২২ নং বাদীপক্ষ ও স্বত্ত্বের ওই মামলার ১ থেকে ২১ নং বিবাদীপক্ষ সোলেনামা আদালতে দাখিল করেন। সোলেনামা দাখিলের ভিত্তিতে গত ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২৯তারিখে রায় ও ২০১৪ সালের অক্টোবর মাসের ২তারিখে মামলাটির ডিক্রী হয়। এরপর বাদী ১৮৩/২০০৮ (স্বত্ত্ব) মোকদ্দমার জবেদা নকল প্রাপ্ত হয়ে জানতে পারেন যে, ২২জন বাদী হয়ে উক্ত মোকদ্দমা আনায়ন করেছিলেন। মামলার মূল আরজী ও সোলেনামায় থাকা বাদী পক্ষের ১ হতে ২২ জনের মধ্যে ১নং ক্রমিক শামসুদ্দিন গত ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসের ৬তারিখ মৃত্যুবরণ করেন, ১১নং ক্রমিক মোছা. জামিলা খাতুন গত ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসের ১৭তারিখ মৃত্যুবরণ করেন, ১৭নং ক্রমিক মোছা. মশিরন বেগম ওরফে নান্দুরী বেওয়া গত ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসের ৩তারিখ মৃত্যুবরণ করেন। শামসুদ্দিন মারা যাওয়ার ১বছর ৪মাস ২৩দিন হলেও বাদীর পিতা ও তার ওয়ারিশ গণের স্বাক্ষর জাল করে দুটি সোলেনামা প্রস্তুত করে তাহা খাঁটি হিসেবে ব্যবহার করায় এবং হস্তলিপি/হস্তরেখা বিশারদ দ্বারা পরীক্ষা করে মতামতের প্রেরণের জন্য বাংলাদেশ পুলিশ রাজশাহী সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (ফরেনসিক) বরাবরে প্রেরণ করা হলে বিভাগীয় ফরেনসিক ল্যাবরেটরি রাজশাহী ৪জনের বিষয়টি নিশ্চিত করায় ও সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদনে প্রাথমিকভাবে সত্যতা প্রতীয়মান হওয়ার আদালত আসামীদের কারাগারে প্রেরণ করেন।
কারাগারে যাওয়া মাদ্রাসা সুপারের পরিবারের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, ষড়যন্ত্র মূলকভাবে আব্দুল আজিজকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সে কোনো জাল স্বাক্ষর করেন নাই। ২০০৮ সালের মামলায় বাদীর পিতা ও তার চাচার সঙ্গে ২০১৩ সালে ১০ হাজার টাকা দিয়ে আপোষ মীমাংসা করেছি। তার পরেও তারা আজ অন্যায়ভাবে একজন সম্মানি ব্যক্তিকে সমাজে অপমানিত করছে।
এদিকে বাদীর পরিবার বলেন, আব্দুল আজিজের পরিবারকে আপোষ করার জন্য বলা হলে তারা মামলাকে হেয় পতিপন্ন ভেবেছিল।
ভুটুজোত পাঠানপাড়া দাখিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার জিয়াউর রহমান বলেন, তিনি যতটুকু জানতে পেরেছেন জমাজমি সংক্রান্ত বিষয়ে সুপারকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সুপার একজন খুবই ভালো মানুষ। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অবগত রয়েছেন কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ইউএনও মহোদয়কে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠানের দিন জানিয়েছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফজলে রাব্বি বলেন, তিনি বিষয়টি অবগত আছেন। ওই মাদ্রাসার সুপারের প্রত্যয়নপত্র নিতে কয়েকজন শিক্ষক এলে তাদের প্রত্যয়নপত্র প্রদান করা হয়েছে। তবে যতটুকু জানতে পেরেছি ওই সুপারকে জমাজমি সংক্রান্ত বিষয়ে কারাগারে যেতে হয়েছে।